বনরুই সম্পর্কে জানা অজানা সকল তথ্য


বনরুই পরিচিতি

বনরুই হচ্ছে প্রানীজগতের Pholidota বর্গের একটি লুজুক স্তন্যপায়ী প্রানী। বনরুই এর ইংরেজী নাম Pangolin. এই “Pangolin" নামটি এসেছে মালয় শব্দ pengguling থেকে যার অর্থ "যে গোল হতে পারে"। জাভানিজ ভাষায় এদেরকে ডাকা হয় টেরেংগিলিং নামে এবং ফিলিপাইন ভাষায়, এদেরকে গোলিং, ট্যাংগিলিং, বা বালিন্টং নামে ডাকা হয়। যদিও সব নামেরই অর্থ একই।

বনরুই কি?

দূর থেকে দেখলে আঁইশযুক্ত এই স্তন্যপায়ী প্রানীটিকে রুই মাছের মতো মনে হয় বলে এর নাম বনরুই মানে বনের রুই বলা হয়। অনেকেই নামের শেষে রুই থাকায় এদের মাছ মনে করে থাকে। বাস্তবে এরা অতি নিরীহ একটি স্তন্যপায়ী প্রানী। এরা বাচ্চা প্রসব করে এবং বাচ্চাকে দুধ খাওয়ায়। অন্যান্য স্তন্যপায়ীদের সাথে বনরুই এর মূল পার্থক্য হচ্ছে বনরুই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রানী যাদের সমস্ত শরীর শক্ত আঁইশ দ্বারা আবৃত থাকে। লাজুক এই প্রানীটির আঁইশ একটি অনন্য বৈশিষ্ট হলেও এই আঁইশের কারনেই তাদের শিকার করা হয়। 

বনরুই কোথায় বাস করে

এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশে এদের পাওয়া যায়। ভারতীয় উপমহাদেশ এবং দক্ষিন পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে এদের বেশী দেখা যায়। সমগ্র আফ্রিকা বিশেষ করে মধ্য আফ্রিকার দেশ সমূহে এদের পাওয়া যায়। এশিয়া ও আফ্রিকার বনভূমিতে এরা বিচরন করে। দের কেউ কেউ বৃক্ষবাসী আবার কেউ কেউ গর্তবাসী। গর্তবাসীরা মাটিতে গর্তকরে বাসা তৈরী করে এবং বৃক্ষবাসীরা গাছের কোঠরে বাসা তৈরী করে থাকে। 

এরা লম্বা এবং ধারালো নখ দ্বারা অনায়াসে গর্ত তৈরী করতে পারে। গর্তবাসী বনরুই মাটিতে প্রায় এগার ফুট গভীর গর্ত তৈরী করে বাসা তৈরী করে। বৃক্ষবাসী বনরুই প্রজাতী গর্ত তৈরী করে না। তারা গাছের কোঠরে বাসা তৈরী করে থাকে।

বনরুই এর প্রকারভেদ

প্রাচীনকাল থেকেই বনরুই চোরাকারবারীদের শিকারের প্রধান টার্গেট ছিলো। যারফলে অনেক প্রজাতির বনরুই বর্তমান সময়ে এসে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। বর্তমানে কিছু প্রজাতির বনরুই বিলুপ্ত হয়ে গেলেও তিনটি পরিবারভূক্ত আটটি প্রজাতির বনরুই এখনো টিকে আছে আফ্রিকা এবং এশিয়ার বনাঞ্চলে। যদিও আট প্রজাতির প্রত্যেকেই বর্তমানে হুমকির মুখে আছে।  আট প্রজাতির বনরুই এর স্থানীয় নাম, বৈজ্ঞানিক নাম এবং প্রাপ্তিস্থান নিম্নে আলোচনা করা হলো।  

০১. ফিলিপাইন বনরুই (Philippine Pangolin/ Palawan pangolin)

ফিলিফাইন বনরুই
ফিলিফাইন বনরুই
বৈজ্ঞানিক নাম Manis culionensis

ফিলিপাইনের পালোয়ান প্রদেশে এদের পাওয়া যায়।


০২. মালয়ী বনরুই (Sunda Pangolin) 

Sunda Pangolin
মালয়ী বনরুই
বৈজ্ঞানিক নাম Manis javanica

মায়ানমার, থাইল্যান্ড, কম্বোডিয়া, লাওস, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ভিয়েতনাম এবং বোর্নিও, জাভা, সুমাত্রা এবং লেসার সুন্ডা দ্বীপপুঞ্জ সহ সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় পাওয়া যায়। এরা বৃক্ষবাসী।


০৩. ইন্ডিয়ান বা দেশী বনরুই (Indian Pangolin)

Indian pangolin
ইন্ডিয়ান/দেশী বনরুই 
বৈজ্ঞানিক নাম Manis crassicaudata

ভারতীয় উপমহাদেশের দেশ সমূহে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে পাওয়া বনরুই সমূহ এই প্রজাতির।


০৪. চায়না বনরুই (Chinese Pangolin)

Chinese Pangolinচায়না বনরুই

বৈজ্ঞানিক নাম Manis pentadactyla
উত্তর ভারতীয় উপমহাদেশ, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উত্তর অংশ এবং দক্ষিণ চীনে এদের একসময় প্রচুর দেখা যেতো। বনরুইদের মধ্যে এদেরকে বেশী পাচার করা হয়েছে। ২০১৪ সাল থেকে আইইউসিএন এর লাল তালিকা অনুযায়ী এরা গুরুতরভাবে বিপন্ন হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিলো।

০৫. Long-tailed Pangolin  (লম্বালেজি বনরুই/কালোপেট বনরুই)

Long-tailed pangolin

লম্বালেজি বনরুই/কালোপেট বনরুই


বৈজ্ঞানিক নাম  Phataginus tetradactyla

এরা বৃক্ষবাসী। পশ্চিম এবং মধ্য আফ্রিকার বনে পাওয়া যায়।


০৬. সাদাপেট বনরুই (Tree Pangolin)

Tree pangolin
সাদাপেট বনরুই

অনেকে  এদের  white-bellied pangolin or three-cusped pangolin, নামে ডাকে।

বৈজ্ঞানিক নাম Phataginus tricuspis

সমগ্র আফ্রিকার বন্য পরিবেশে এদের পাওয়া যায়।


০৭. বৃহৎ বনরুই (Giant Pangolin)

Giant pangolin
বৃহৎ বনরুই

বৈজ্ঞানিক নাম Smutsia gigantea

বনরুইদের মধ্যে এরাই আকারে সবছেয়ে বড় হয়ে থাকে। আফ্রিকা বনভূমিতে এদের পাওয়া যায়।


০৮. টেম্মিঙ্কের বনরুই (Ground Pangolin)

Ground Pangolin
টেম্মিঙ্কের বনরুই

অনেকেই এদেরকে Temminck's pangolinCape pangolin or steppe pangolin,নামে ডাকে।

বৈজ্ঞানিক নাম Smutsia temminckii

এদেরকে  আফ্রিকা অঞ্চলে পাওয়া যায়।


বনরুই এর দৈহিক গঠন   

বনরুই একটি ছোট আকারের স্তন্যপায়ী প্রানী। প্রজাতিভেদে এদের আকার ও ওজনের তারতম্য দেখা যায়। প্রজাতিভেদে একটি বনরুই আকারে ২-৪ ফুট লম্বা হতে পারে এবং ওজন ৩-২৭ কেজি হতে পারে। তবে পুরুষ বনরুইগুলো আকারে স্ত্রী বনরুই এর ছেয়ে বড় হয়।

সচারচর স্তন্যপায়ী প্রানীদের দেহ লোম দ্বারা আবৃত থাকে এবং আঁইশ থাকে না। তবে বনরুইই একমাত্র স্তন্যপায়ী প্রানী যাদের সম্পূর্ন দেহ শক্ত আইঁশ দ্বারা আবৃত থাকে। এই আঁইশগুলো কেরাটিন দ্বারা গঠিত যা আমাদের হাত পায়ের নখ এবং চুলেও থাকে। নবজাতক বনরুই এর দেহের আঁইশগুলো হয় নরম। যা বয়স বাড়ার সাথে সাথে শক্ত হয়ে যায়। ভয় পেলে কিংবা শত্রুর উপস্থিতিতে এরা এদের মাথা লেজের নীচে রেখে গোল হয়ে বলের মতো আকার ধারন করে। তখন এদের আঁইশগুলো বর্মের মতো প্রতিরক্ষার কাজ করে।

বনরুই এর আরেকটি চমৎকার দৈহিক বৈশিষ্ট হচ্ছে এদের মুখে কোন দাঁত নেই। এদের একটি লম্বা আঠালো জিহ্বা আছে যা এরা প্রায় ৪০ সেমি পর্যন্ত নিক্ষেপ করতে পারে। 

বনরুই এর চারটি ছোট ছোট পা আছে। ছোট ছোট পায়ে লম্বা ধারালো নখ থাকে। 

বনরুই এর চারটি পা থাকলেও মাঝে মাঝে এরা দুই পায়ে ভর দিয়ে হাঁটতে পারে। অন্যান্য স্তন্যপায়ীর মতোই বনরুই জন্মগত ভাবেই ভালো সাঁতারু।

 

বনরুই এর আচরন

বনরুই লাজুক এবং ভীতু প্রানী। তাই এরা সবসময় লোক চক্ষুর আড়ালে থাকতেই পছন্দ করে। বনরুই নিশাচর প্রানী। দিনের বেলায় এরা গর্তের মধ্যে বলের মতো গোল হয়ে ঘুমিয়ে কাটায় এবং সন্ধ্যার পরে খাদ্যের খোজে বের হয়। বনরুই এর দৃষ্টিশক্তি দুর্বল তবে এদের ঘ্রান শক্তি ও শ্রবণ শক্তি অনেক উন্নত। এই সু-বিকশিত ঘ্রান শক্তি ও শ্রবণ শক্তি দ্বারাই এরা পোকামাকড় খুজে পায়।

বিপদে পড়লে বনরুই তাদের মলদ্বারের নিকটবর্তী গ্রন্থি থেকে একধররেন বিষাক্ত গন্ধযুক্ত রাসায়নিক নির্গত করে। যার ফলে অন্য শিকারী প্রানীগুলো বনরুই শিকার করা থেকে বিরত থাকে।

 

বনরুই এর খাদ্যভাস

বনরুই কীটভোজী প্রানী। এরা কীটপতঙ্গ খায়। তবে এদের খাদ্যের প্রধান উপকরন হচ্ছে পিঁপড়া এবং উঁইপোকা। মাঝে মাঝে অন্যান্য পোকামাকড়ের লার্ভাও খেয়ে থাকে। এরা নখ দ্বারা উইপোকা এবং পিপড়ার বাসা খনন করে খায়। এরা এদের লম্বা জিহ্বা কীটপতঙ্গের গর্তের ভিতর নিক্ষেপ করে এবং জিহ্বার আঠা দ্বারা কীটপতঙ্গকে আটকিয়ে মুখে নিয়ে আসে। বনরুই এর পাকস্থলি পিঁপড়া এবং উইপোকা হজম করার জন্য বিশেষ ভাবে সুগঠিত।

বনরুই স্তন্যপায়ী হলেও এদের কোন দাঁত নেই। আবার এদের খাবার চিবানোর ক্ষমতাও নেই। তাই এরা খাবার সরাসরি গিলে ফেলে। মজার ব্যাপার হচ্ছে এরা খাবার গ্রহণের আগে ও পরে ছোট ছোট পাথর খেয়ে নেয়। এই পাথর পাকস্থলিতে পিঁপড়াকে পিষতে সাহায্য করে।


বনরুই এর সামাজিক আচরন

বনরুই একাকী প্রানী। এরা একা একা থাকতেই পছন্দ করে। তবে প্রজনন মৌসুমে স্ত্রী পুরুষ একত্রিত হয়। স্ত্রী বনরুই একসাথে দুই থেকে তিনটি বাচ্চার জন্ম দেয়। বাচ্চাগুলো জন্মের পর থেকে আত্বঃনির্ভরশীল হওয়ার আগ পর্যন্ত এরা দুই বছর মায়ের সাথে থাকে। বাচ্চা জন্মানোর আগে বা পরে পুরুষ বনরুই কোনরূপ দায়িত্ব নেয় না। বনরুই লাজুক প্রকৃতির। এরা লোক চক্ষুর আড়ালে থাকতেই পছন্দ। 


বনরুই এর প্রজনন

বনরুই দুই বছর বয়সে যৌন পরিপক্কতা অর্জন করে। কোন সুনির্দিষ্ট প্রজনন মৌসুম না থাকলেও বছরের গ্রীষ্ম বা শরৎকালে একবারের জন্য স্ত্রী পুরুষ সঙ্গম করে থাকে। মিলনের জন্য পুরুষ বনরুই স্ত্রী বনরুইকে খোজে বের করে না। পুরুষ বনরুই তার বাসার আশে পাশের এলাকায় প্রস্রাব এবং মলদিয়ে চিহ্নিত করে রাখে। সেই চিহ্ন দ্বারা স্ত্রী বনরুই পুরুষ বনরুইকে খুজে বের করে এবং রাতের বেলায় সঙ্গমে লিপ্ত হয়।  

গর্ভকালীন সময় প্রজাতি বেধে ৭০-১৪০ দিন পর্যন্ত হয়ে থাকে। আফ্রিকার বনরুইগুলো প্রতিবারে একটি করে বাচ্চার জন্ম দেয় যদিও এশিয়াটিক বনরুইগুলো এক থেকে তিনটি বাচ্চার জন্ম দিয়ে থাকে। জন্মের সময় বাচ্চাদের ওজন হয় ৮০ থেকে ৪৫০ গ্রাম পর্যন্ত। সদ্যজাত বাচ্চাদের দেহের আঁইশগুলো থাকে সাদা, নরম এবং তুলতুলে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আঁইশগুলো শক্ত হয় এবং রঙ্গের পরিবর্তন ঘটে।

বাচ্চা বনরুইগুলো প্রথম দুই থেকে চার সাপ্তাহ মায়ের সাথে গর্তের ভিতর থাকে। এই সময় কোনরূপ বিপদ বা হুমকি অনুভব করলে মা বনরুই বাচ্চাদের বুক নিয়ে গোল হয়ে বলের মতো আকার ধারন করে।  একমাস বয়সের পর বাচ্চাগুলো মায়ের পিঠে করে প্রথম গর্ত থেকে বের হয়। বাচ্চা বনরুইগুলো তিন মাস ময়ের দুধ খায়। তিনমাস পর থেকে এরা পোকামাকড় খাওয়া শুরু করে। বাচ্চারা দুই বছর পর যৌন পরিপক্ক হলে আলাদা হয়ে যায় স্বাধীন জীবন কাটানো জন্য।


বনরুই বিলুপ্তির কারন

বনরুই এর আঁইশ এবং মাংস ঐতিহ্যগত ওষধ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। যার ফলে চোরাকারবারীরা এদের পাচার করার জন্য শিকার করে। পৃথিবীর সবছেয়ে বেশী পাচার হওয়ার স্তন্যপায়ী হচ্ছে বনরুই। চীন, ভিয়েতনাম বনরুই পাচারের জন্য সবছেয়ে বড় বাজার। ধারনা করা হয় বছরে প্রায় এক লক্ষ বনরুই চীনের বাজারে পাচার করা হয়। এর পর রয়েছে আফ্রিকার দেশ নাইজেরিয়া এবং ঘানা। অনেক দেশে বনরুই এর মাংস মুখরোচক খাদ্য হিসেবে স্বীকৃত। যারফলে বন্য পরিবেশ হতে বনরুই শিকার করার প্রবণতা অন্য যেকোন প্রানীর ছেয়ে অনেক বেশী। আবার প্রচুর পরিমানে বন উজাড় করার ফলে এদের আবাস্থল হুমকির মুখে পড়ছে। যারফলে ২০২০ সাল পর্যন্ত বনরুই এর আট প্রজাতির পত্যেকেই হুমকির মুখে হিসেবে তালিকাভূক্ত করা হয়েছে।

আইইউসিএন এর লাল তালিকা অনুযায়ী বনরুই এর আট প্রজাতির মধ্যে বর্তমানে তিনটি প্রজাতি গুরুতরভাবে বিপন্ন, তিনটি প্রজাতি বিপন্ন এবং দুটি প্রায় বিপন্ন হিসেবে তালিকাভূক্ত।


বনরুই সংরক্ষন

বনরুই এর চোরাকারবার রুখতে ২০১৪ সালে স্কেলিং আপ প্যাঙ্গেলিন কনজারভেশন নামে একটি বৈশ্বিক কর্মপরিকল্পনা গঠন করে IUCN SSC. ২০১৮ সালে চীনের একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান কাউন্টিং প্যাঙ্গোলিন আন্দোলন শুরু করে। তারপরেও চোরকারবারীরা নানান উপায়ে বনরুই পাচার করছে। 

বর্তমানে তাইওয়ানে সবছেয়ে বেশী বনরুই দেখা যায়। এর কারন হচ্ছে বনরুই সংরক্ষনের জন্য তাইওয়ান সরকার নানার পদক্ষেপ নিয়েছে। জনসচেতনাতা এবং শিকার ও পাচার বন্ধে কঠোর আইনের কারনে প্রাকৃতিক পরিবেশে সবছেয়ে বেশী বনরুই রয়েছে তাইওয়ানে। 

বনরুই এর ইউমিনিটি সিস্টেম একেবারেই দুর্বল। আবার এদের খাদ্যাভাসও সীমিত। যারফলে বন্দী অবস্থায় এদের সংরক্ষন করা সম্ভব হয় না। বন্দী অবস্থায় বনরুই এর বংশবৃদ্ধির জন্য মায়ানমার কয়েকবার উদ্দোগ গ্রহন করলেও সীমিত ও নির্দিষ্ট খাদ্য এবং দুর্বল ইমিউনিটি সিস্টেমের কারনে এই চেষ্টা ব্যাহত হয়েছে।

বেআইনিভাবে পাচার এবং বনরুই সম্পর্কে মানুষকে সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রতি বছর ফেব্রুয়ারী মাসের তৃতীয় শনিবার বিশ্ব বনরুই দিবস পালন করা হয়।


বনরুই এর উপকারীতা

প্রাচীনকাল থেকে মানুষ বিশ্বাস করে আসছে বনরুই এর আঁইশ মানুষের জন্য মূল্যবান ঔষদ তৈরীতে ব্যবহৃত হয়। বিশেষ করে চীন, ইন্দোনেশীয়ার মানুষ তাদের ঐতিহ্যগত ওষদ তৈরীতে বনরুই এর আঁইশ ও মাংস ব্যবহার করে আসছে। 

বনরুই এর আঁইশ কিংবা মাংসে কোন ঔষদি গুন আছে কিনা তা নিয়ে বিজ্ঞানীরা অনেক গবেষনা করেও কোন সঠিক তথ্য খুজে পায় নি। তাই বনরুই এর আঁইশ এবং মাংস মানুষের উপকারে আসে এইটা ভুল ধারনা। কিন্তু প্রাচীনকাল থেকে মানুষের অন্ধ বিশ্বাসের কারনে মানুষ বনরুই এর আঁইশ এবং মাংস ব্যবহার করে আসছে ঔষধ হিসেবে। 

বিশেষ করে গর্ভকালীন সময়ে ব্যাথা উপশম, শরীরের বিভিন্ন অঙ্গের ব্যাথা নিরাময়ে এবং হাঁপানি চিকিৎসায় বনরুই এর আঁইশ ব্যবহার করা হয়। 

চিকিৎসা ক্ষেত্রে বনরুই কোন উপকারে আসে কিনা তা নিয়ে সংশয় থাকলেও বনরুই বাস্তুতান্ত্রিক গুরুত্ব বহন করে। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক বনরুই দিনে ১৪০ থেকে ২০০ গ্রাম পিঁপড়া বা উইপোকা খেয়ে থাকে। সেই হিসেবে প্রাকৃতিক পরিবেশে উইপোকার দমনে বনরুই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।


বনরুই এর দাম

বনরুই এর বাণিজ্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তাই খোলা বাজারে বনরুই এর মূল্য সম্পর্কে কোন ধারনা নেই। তবে চোরা বাজারে বনরুই এর মূল্য অনেক বেশী। বিশেষ করে বনরুই এর আঁইশের মূল্য অনেক বেশী। সম্প্রতিক সময়ে বনরুই এর পাচার রোধে নানাবিধ পদক্ষেপের কারনে চোরা বাজারে বনরুই এর মূল্য অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে চোরা বাজারে এক  কেজি বনরুই এর আঁইশের মূল্য তিন লক্ষ থেকে ছয় লক্ষ টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। যেখানে ১৯৯০ সালে এক কেজির মূল্য ছিলো মাত্র ১৪০০ টাকার মতো।  

কোভিড ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার পরে অনেকেই ভেবেছিলো বনরুই দ্বারা প্রথম মানুষ সংক্রমিত হয়েছিলো। বনরুই এর দেহে পাওয়া কোভিড ভাইরাসের আরএন এর সাথে মানুষের দেহের কোভিড ভাইরাসের আরএন এর সাথে প্রায় ৮০% মিল পাওয়া গেছে। তবে বিষদ পরীক্ষায় জানা যায় প্রাথমিক পরীক্ষার সময় ব্যবহৃত যন্ত্রে ত্রুটি থাকায় তা ভুল তথ্য ছিলো। 


শেষ কথা

মানুষের বর্বতার স্বাক্ষী এই বনরুই। মানুষ নিজেদের স্বার্থে প্রকৃতির এই অপূর্ব সৃষ্টি শান্ত ও নিরীহ এই প্রানীটির উপর কি পরিমান ধ্বংস লীলা চালিয়েছে তা অনুমান করা যায় তাদের বিলুপ্তির কাছাকাছি চলে যাওতেই। অথচ এই পৃথিবী যতোটা মানুষের ততোটা এই পৃথিবীর বুকে টিকে থাকা প্রতিটি প্রানীর।বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রার সাথে সাথে মানুষের মাঝে কুসংস্কার দূর হয়েছে। আশা করি মানুষ এখন এই প্রানীটিকে আর শিকার করবে না কুসংস্কারে বিশ্বাস করে। প্রকৃতি থেকে একটি প্রানীর বিলুপ্তি মানে সমগ্র পৃথিবীর জন্য তা হুমকি। 

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url