বিড়ালের জাত- বড় আকারের জনপ্রিয় বিড়ালের জাত সমূহ
বিড়ালের সাথে আমরা সবাই পরিচিত। সারা পৃথিবী আনুমানিক ২০০ জাতের বিড়াল আছে। তবে CFA (The Cat Fanciers Association) এর অধিনে ৪০টি জাত নিবন্ধিত এবং ICA (International Cat Association) এর অধিনে ৭১ জাতটি নিবন্ধিত। এতোগুলো বিড়ালের জাতের মধ্যে কোনটা আকারে বড়, কোনটা খাটো। কারো পশম লম্বা আবার কারো খাটো। সবগুলো বিড়ালই সুন্দর এবং আকর্ষনীয়। আজকের এই পোস্টে পৃথিবীর সবছেয়ে বড় আকারের জনপ্রিয় বিড়ালের জাত সমূহ সম্পর্কে আলোচনা করবো।
০১. মেইন কুন (Maine Coon)
Maine Coon cats (Image source Pixaby) |
এই বিড়ালের জাতটির বিকাশ কিভাবে হয়েছে তা নিয়ে অনেক মুখরোচক গল্প থাকলেও এর সঠিক ইতিহাস কারোই জানা নেই। তবে ধারনা করা হয় প্রাচীনকালে নাবিকেরা তাদের জাহাজে রক্ষিত খাদ্যশস্যকে ইঁদুরের হাত থেকে রক্ষা করতে বিড়াল রাখতো। এই বিড়ালদের কোন কোনটা তীরে এসে স্থানীয় জনপদের সাথে থেকে গেছে। এই বিড়ালগুলো সম্ভবত নরওয়েয়ান বন্য বিড়াল (Norwegian Forest Cat) কিংবা সাইবেরিয়ান বন্য বিড়ালের (Siberian Cats) হতে পারে। উপকূলে আসার পরে সম্পূর্ন বিপরীত ও বৈরী আবহাওয়ার কবলে পড়ে এরা। এই বৈরী আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে এদের অনকে সমস্যার সম্মুখিন হতে হয়। সম্পূর্ন বৈরী ও অনুকূল আবহাওয়ার পরেও যারা টিকে গেছে তাদের বংশধরেরা নতুন পরিবেশের সাথে সহজেই মানিয়ে নিয়েছে এবং এদের শাররীক বৈশিষ্টে অনেক পরিবর্তন এসেছে। এই বিড়ালগুলোই পরবর্তীতে বিকশিত হয়ে মেইন কুন (Maine Coon) জাত হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। যদিও এইটা একটা সম্ভাব্য ধারনা তবে সত্যিকারের কোন ধারনা কারো জানা নেই।
ইতিহাস যাইহোক বর্তমানে এই বিড়ালগুলো অনেক জনপ্রিয় একটি জাত। এরা পোষা প্রানী হিসেবে খুবই ভদ্র প্রকৃতির তাই এদেরকে অনেকে "the gentle giant" বলে। এই জাতটিকে সবছেয়ে বড় জাত বলা হয় কেনো তা এদের শাররীক গঠন দেখলেই বুজতে পারবেন।
আকার আকৃতিঃ
প্রাপ্ত বয়স্কে এদের উচ্চতা হয় ১-১.৫ ফুটের মতো আর লেজ সহ লম্বায় তিনফুট থেকে সোয়া তিনফুটের মতো হয়ে থাকে। প্রাপ্ত বয়স্ক পুরুষ মেইন কুনের ওজন হয় ৫.৯ থেকে ৮.২ কেজি এবং প্রাপ্ত বয়স্ক মহিলা মেইন কুনের ওজন হয় ৩.৬ থেকে ৫.৪ কেজি। ২০১৮ সালে ব্যারিভেল নামক মেইন কুন গিনেস বুকে নাম উঠায়। এটি লম্বায় ছিলো ৩ ফুট ১১.২ ইঞ্চি। যা এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত সবছেয়ে বড় মেইন কুন বিড়াল।
০২. সাভান্নাহ (Savannah)
একটি প্রথম প্রজন্মের ধূসর বর্ণের Savannah Cats (Image Source- Flicker.com) |
বিড়াল নিয়ে মানুষের আগ্রহ সেই প্রাচীনকাল থেকেই। সেই আগ্রহ থেকেই ১৯৮৬ সালে জুডী ফ্রাংক নামক এক ব্যাক্তি গৃহপালিত সিয়ামেসি (Siamese) বিড়ালের সাথে বন্য র্সাভাল (Serval) বিড়ালের ক্রস ঘটান। যেখানে বন্য সার্ভাল বিড়াল আকারে অনেক বড়। এই দুইটি বিড়ালের ক্রসে যে হাইব্রিড জাতের বিড়ালের জন্ম হয় তার নাম দেওয়া হয় Savannah (সাভান্নাহ)।
Savannah মূলত একটি হাইব্রিড জাতের বিড়াল। এই বিড়ালগুলো দেখতে অনেকটা সিলিন্ডার আকৃতির। অর্থ্যাৎ বিড়ালগুলোর দেহ লম্বা, সরু এবং উঁচু। বন্য বিড়ালের সাথে ক্রস ব্রিডিং এর মাধ্যমে প্রথম যে প্রজন্ম পাওয়া যায় তাদের মাঝে বন্য স্বভাবটা বেশী পরিলক্ষিত হয়। তবে এই প্রজন্মের বিড়ালগুলো আকারে সবছেয়ে বড় হয় এবং বন্য সার্ভাল বিড়ালের মতো এদের শরীরের কালো কালো ছোপ থাকে যার ফলে এদের দেখতে অনেক আকর্ষনীয় লাগে। প্রথম প্রজন্মের একটি প্রাপ্ত বয়স্ক সাভান্নাহ লম্বায় প্রায় ১৭ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে এবং ওজন হয় প্রায় ১১ কেজির মতো।
আবার প্রথম প্রজন্মের সাভান্নাহ বিড়ালগুলোকে যখন নিজেদের মাঝে প্রজনন করা হয় তখন যে নতুন প্রজন্ম বা বাচ্ছার জন্ম হয় তারা আকারে কিছুটা ছোট হয় এবং তাদের মাঝে বন্য স্বভাবটা অনেটাই হ্রাস পায়। বন্য স্বভার হ্রাস পেলেও এদের দেহের রঙ্গ বর্ণের পরিবর্তন খুব কমই হয়। দ্বিতীয় প্রজন্মের বিড়ালগুলো পোষা প্রানী হিসেব সবছেয়ে ভালো হয়। এই প্রজন্মের বিড়ালগুলো আকারে প্রথম প্রজন্ম থেকে কিছুটা ছোট হয়ে থাকে। দ্বিতীয় প্রজন্মের বিড়ালগুলোর ওজন ৭.৫ (সাড়ে সাত কেজির মতো হয়ে থাকে। এই ভাবে এক জেনারেশন থেকে আরেক জেনারেশনে এদের বন্য স্বভাব হ্রাস পায় এবং একই সাথে এদের আকার ও ওজন কমতে থাকে।
গিনেস বুকে সবছেয়ে লম্বা বিড়ালের রেকর্ডটা সাভান্নাহ জাতের দখলে। আমেরিকার কয়েকটা অঙ্গরাজ্যে সাভান্নাহ বিড়ালগুলো পালন করা নিষিদ্ধ কারন এদের বন্য স্বভাবের জন্য। এই বিড়ালগুলো এক লাফে প্রায় ছয় থেকে আট ফুট পর্যন্ত যেতে পারে এবং গাছে ছড়ার জন্য এদের খ্যাতি আছে।
০৩. নরওয়েজিয়ান বন বিড়াল (Norwegian Forest Cat)
Norwegian Forest Cat |
অনিন্দ সুন্দর নরওয়জিয়ান বন্য বিড়ালগুলো আদিকাল থেকেই কবি সাহিত্যিকদের কবিতায়, উপকথা, রূপকথায় স্থান পেয়ে এসেছে। বিশাল আকারের এই বিড়ালগুলো নিয়ে অনেক মিথ ছড়িয়ে আছে নরওয়ের মানুষের মুখে মুখে। কিন্তু েএই নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো কোন যায়গা থেকে এসেছে?
এই প্রশ্নটার উত্তর খুজতে গেলে হাজার হাজার গল্প পাওয়া যাবে কিন্তু সঠিক কোনটা তা কেউই বলতে পারবে না। হাজার হাজার গল্পের মাঝে যে তথ্যটা সবছেয়ে বেশী গ্রহণযোগ্য তা হচ্ছে-
১০০ শতাব্দির কিছু সময় পরে রোমাদের দ্বারা সাদা কালো ব্রিটিশ শর্ট হেয়ার বিড়ালগুলো নরওয়েতে এসেছে। আবার ১৪ শতাব্দিতে ক্রসেডারদের দ্বারা লম্বা চুলের বিড়ালগুলো নরওয়েতে এসেছে। শিকার ধরায় এরা অনেক পারদর্শী ছিলো বলে খামারে এদের রাখা হতো। এই বিড়ালগুলো নিজেদের মাঝে প্রজননের মাধ্যমে বংশধর বৃদ্ধি করেছে। উত্তর নরওয়ের আবহাওয়া অনেক শীতল এবং এইখানে মে থেকে আগস্ট পর্যন্ত সূর্য অস্ত যায় না। আবার এই অঞ্চলে শীতের সময় রাত্রীর দৈর্ঘ্য অনেক লম্বা যার ফলে টিকে থাকার জন্য এই বিড়ালগুলোর শরীর বিশেষ ভাবে অভিযোজিত হয়েছে। ফলে এদের লম্বা পশম, সুঠোম ও শক্তিশালী দেহ গঠিত হয়েছে যাতে তারা সেই অঞ্চলে টিকে থাকতে পারে। এদের লম্বা পশমগুলো অনেক ঘন ও পানিরোধী। প্রথম নজরে এদের যেকেউই মেইন কুন বলে ধারনা করবে কারন এরা দেখতে প্রায় মেইনকুনের মতোই। নরওয়ের বিশাল জঙ্গলে টিকে থাকতে শাররীক গঠনের সাথে সাথে এদের বুদ্ধিবৃত্তির বিকাশ ঘটেছে অন্য বিড়ালেদের তুলনায়।
বন্যবিড়ালগুলো আকারে বড় হয়ে থাকে। সেই সূত্রে নরওয়েজিয়ান বন বিড়াল (Norwegian Forest Cat) গুলোর আকারও অন্য গৃহপালিত বিড়ালদের তুলনায় বড়। পুরুষ নরওয়েজিয়ান বিড়ালগুলো আকারে স্ত্রী বিড়ালের তুলনায় একটু বেশী ওজনের হয়ে থাকে।
০৪. রাগডল (Ragdoll)
রাগডল (Ragdoll) বিড়াল (Image Source maxfixel.net) |
একটি বিড়াল কতো বড় হলে তাকে "কুকুর মতো বিড়াল" নাম দেওয়া যেতে পারে? রাগডল এমনি একটি বিড়াল যাকে আমেরিকার স্থানীয়রা আদর করে নাম দিয়েছে "কুকুরের মতো বিড়াল"। এই নাম দেওয়ার পিছনের কারন হচ্ছে রাগডলের বিশাল আকার। গৃহপালিত বিড়ালগুলোর মাঝে বড় জাতের তালিকা করলে রাগডল উপরের সারিতেই থাকবে।
আকারে বড় এবং শক্তিশালী হলেও এই বিড়ালগুলো অনেক বেশী সামাজিক, বিনয়ী, শান্ত স্বভাবের এবং শিশু ও অন্যান্য পোষা প্রানীর সাথে সহজেই মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা রয়েছে। যার জন্য এরা বিড়ালপ্রেমীদের নিকট অনেক জনপ্রিয় বিশেষ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। শুধুমাত্র সামাজিকতা কিংবা শান্ত এর জন্য না, এই বিড়ালগুলো দেখতেও অনেক বেশী আকর্ষনীয়। এদের মাজারি আকারের সিল্কি পশম যখন বাতাসের সাথে দোল খেয়ে যায় তখন তা দেখে যে কারোই মন ভালো লাগবে। এর সাথে এদের নীল চোখের গভীর প্রেমময় চাহনি অবজ্ঞা করার সাহস কারো হবে না।
তুলতুলে স্নেহময়ী নীল চোখের এই বিড়ালগুলো যখন কারো কোলে থাকে তখন দেখতে অনেকটা পুতুলের মতো মনে হয়। তাই এদের নামটা রাগডল করা হয়।
রাগডল বিড়ালগুলোর
ইতিহাস খুব বেশী দিনের না। আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার বিড়ালের ব্রিডার আ্যন বেকার
(Ann Baker) ১৯৬০ সালে প্রথম রাগডল বিড়ালের জাত উদ্ভাবন করেন।
রাগডল বিড়ালের জন্ম হয়েছে জোসেফাইন (Josephine) নামক একটি গৃহপালিত লম্বাচুলের সাদা বিড়ালেরর গর্ভথেকে। Josephine সম্ভবত Persian/Angora জাতের বিড়াল ছিলো। বিড়ালের প্রজনন কালীন আচরনের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী স্ত্রী বিড়াল হিট সাইকেলে থাকা অবস্থায় একাধিক পুরুষ বিড়ালের সাথে মিলিত হয়ে। তেমনি জোসেফাইনও (Josephine) অজানা পুরুষ বিড়ালের সাথে মিলিত হয়েছে। ধারনা করা হয় এই পুরুষগুলো হয়তো বার্মিজ কোন বিড়ালের জাত হবে যেখানে একটি পুরুষ বিড়াল সিয়ামেজি পয়েন্ট কালারের ছিলো।
জোসেফাইনের
বাচ্চা গুলোর মাঝে একটি শান্ত স্বাভাবের স্নেহশীল বিড়াল ছানা ছিলো। যা দেখে মিস্টার আ্যান বেকার এদের ডেভলপ করার চিন্তা করেন। এইভাবে কয়েক জেনারেশন
পরে মিস্টার আ্যান বেকার প্রথম বিড়ালের একটি স্বতন্ত্র জাত তৈরী করেছেন এবং এদের নাম করন করেন রাগডল।
এই অসাধারণ পরিবার-বান্ধব জাতটি ১৯৯০-এর দশকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করে। ১৯৯৩ সালে The Cat Fanciers Association (CFA) রাগডল বিড়ালগুলোকে স্বতন্ত্র জাত হিসেবে স্বিকৃতি দেয়। বর্তমানে রাগডল বিড়ালগুলো পাঁচ নাম্বার জনপ্রিয় বিড়ালের স্থান দখল করে আছে।
ওজন: পুরষ রাগডল বিড়ালগুলোর স্ত্রী রাগডল থেকে একটু বেশী হয়। পুরুষ রাগডলের গড় ওজন 20 পাউন্ড বা ০৯ (নয়) কেজি এবং মহিলাদের ওজন ১০ থেকে ১৫ পাউন্ডের মধ্যে বা ৫-৭ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
উচ্চতা: রাগডল
বিড়ালগুলো উচ্চতা কাঁধ থেকে পায়ের পাতা পর্যন্ত ১১-১৩ ইঞ্চি পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পশম: এদের
পশম বেশী লম্বা না আবার খাটোও না। মানে মাঝারি দৈর্ঘ্যের। তবে এদের পশমগুলো সিল্কি
টাইপের যার ফলে এদের স্পর্শ করলে অন্যরকম একটা অনুভূতি হয়।
গায়ের রং: এদের গায়ের রং দুইটি বা তিনটি রঙ্গের মিশ্রনে হয়ে থাকে।
চোখের রঙ:
নীল চোখ
গড় আয়ু: ১৩
থেকে ১৫ বছর। তবে সঠিক যত্ন করলে এরা আরো বেশী দিন বেঁচে থাকাতে পারে।
০৫. সাইবেরিয়ান (Siberian Cat)
সাইবেরিয়ান বিড়াল |
তুলতুলে সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলো তাদের উচ্চতা এবং বন্ধুত্বপূর্ণ আচরনের জন্য সকলের কাছেই প্রিয়। বিশালাকার এই বিড়ালগুলোর আনুষ্ঠানিক নাম সাইবেরিয়ান ফরেস্ট ক্যাট। যদিও সংক্ষিপ্তভাবে সবাই এদের সাইবেরিয়ান বিড়াল বলেই ডাকে। সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলোর সাথে নরওয়েজিয়ান ফরেস্ট ক্যাট এর অনেক বেশী মিল থাকায় অনেকে এদের দুইজনকে এক করে ফেলে। প্রকৃতপক্ষে এটি সাইবেরিয়ার একটি স্বতন্ত্র বিড়াল যা রাশিয়ার জাতীয় বিড়াল হিসেবে স্বীকৃত।
সাইবেরিয়ান
বিড়ালগুলোর আদি নিবাস রাশিয়ায়। অর্থাৎ এই জাতটার বিকাশ ঘটেছে রাশিয়া থেকে। তবে ঠিক
কবে রাশিয়ায় এই বিড়ালগুলোর বিকাশ ঘটেছে তা সঠিক ভাবে বলা বলা মুশকিল, তবে বিভিন্ন রাশিয়ান
রূপকথার গল্প এবং শিশুদের বইয়ের উপর ভিত্তি করে ধারনা করা হয় সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলো
শত শত বছর ধরেই রাশিয়ায় রয়েছে। এইটা হতে পারে ১০০০ বছর এর কাছাকাছি বা তারো বেশী। সাইবেরিয়ান
বিড়ালগুলোকে রাশিয়ায় জাতীয় সম্পদ হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
সাইবেরিয়ান
বিড়ালের কথা সর্বপ্রথম হ্যারিসন ওয়েয়ার (Harrison Weir) নামক একজন লেখকের "Our Cats and
All About Them" বইয়ে
উল্ল্যেখ করা হয়েছে। এই বইটি ১৯৮৯ সালে প্রকাশিত হয়েছিলো।
১৯৯০ সালে
শীতল যুদ্ধের বাষ্প গলে গেলে যুক্তরাষ্ট্র সাইবেরিয়ান বিড়াল সর্ম্পকে জানতে পারে। লম্বা
লম্বা পশমের তুলতুলে বিশাল আকারের এই সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলো দেখে মার্কিনরা আমেরিকায়
নিয়ে আসে। পরে ক্যাট ফ্যানসিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (CFA) এবং দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্যাট
অ্যাসোসিয়েশন (ICA) এদের স্বতন্ত্র জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। মোটামুটি ১৯৯০
সাল থেকে সারা পৃথিবীতে এই সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলোর
জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।
ওজনঃ পুরুষ
সাইবেরিয়ান বিড়ালের ওজন স্ত্রী সাইবেরিয়ান বিড়ালের ছেয়ে একটু বেশী হয়ে থাকে। প্রাপ্ত
বয়স্ক পুরুষ সাইবেরিয়ান বিড়ালের ওজন হয় ৫-৮ কেজি এর মতো এবং প্রাপ্ত বয়স্ক স্ত্রী সাইবেরিয়ান
বিড়ালের ওজন হয় ৪-৬ কেজি পর্যন্ত।
উচ্চতাঃ সাইবেরিয়ান
বিড়ালগুলো উচ্চতার দিক থেকে দেড় থেকে দুই ফুট পর্যন্ত হয়ে থাকে।
পশমঃ এদের
পশম লম্বা কিংবা মাঝারি আকৃতির হয় এবং বিভিন্ন রঙ্গের হয়ে থাকে। সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলোর
চোখের বর্ণও সব ধরনের রঙ্গের হয়ে থাকে।
গড় আয়ুঃ সাইবেরিয়ান বিড়ালগুলো লম্বাজীবনধারী। এদের গড় আয়ুষ্কাল ১২-১৮ বছর।
সাইবেরিয়ান বিড়ালদের সামনের পায়ের চেয়ে পিছনের পা আকারে একটু বেশী লম্বা হয়ে থাকে। যার ফলে এরা খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে।
সাইবেরিয়ান
বিড়ালগুলো তুলনামূলক ভাবে অন্যান্য বিড়ালের আগেই প্রজনন পরিপক্কতা অর্জন করে। চার পাঁচ
মাস বয়সেই এই বিড়ালগুলো প্রজনন করার জন্য প্রস্তুত হয়ে যায় এবং একসাথে ৫-৬টি বাচ্চার
জন্ম দিয়ে থাকে।
০৬. রাগামুফিন (Ragamuffin)
রাগামুফিন বিড়াল (Image Source Wikimedia Commons) |
রাগামুফিন (Ragamuffin) গৃহপালিত বিড়ালের একটি স্বতন্ত্র জাত। গৃহপালিত আরেকটি বিড়ালের জাত রাগডল (Ragdoll) এর সাথে রাগামুফিন (Ragamuffin) নাম দুইটার মাজে যেমন মিল আছে তেমনি এদের চেহারার, আকার আকৃতিরও মিল আছে। দেখতে দুইটা প্রায় একই রকম বলে, একসময় রাগামুফিন বিড়ালগুলোকে রাগডল বিড়ালের একটি রূপ হিসেবে মনে করা হতো। ১৯৯৪ সালে এটিকে স্বতন্ত্র জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। দুইটি ভিন্ন জাতের মাঝে এতো বেশী মিল থাকার মূল কারন হচ্ছে দুইটা জাতের উৎপত্তি একই মায়ের গর্ভ থেকে হয়েছে।
রাগামাফিন বিড়ালগুলো জন্ম হয়েছে রাগডল বিড়ালের সাথেই। ১৯৬০ দশকে জোসেফাইন নামক একটি লম্বা পশমের বিড়াল সম্ভবত পার্সিয়ানা কিংবা বার্মিজ জাতের বিড়াল অনেকগুলো বাচ্চার জন্ম দিয়েছে। সেই বাচ্চাগুলো থেকেই কয়েক প্রজন্ম বাদে রাগডল বিড়ালের জন্ম হয়েছে। সেই একই প্রজন্মের বিড়াল বাচ্চাগুলো হতে একটা আলাদা করে তার সাথে তুর্কিশ এনগোরা, হিমালয়ান, পার্সিয়ানা এবং লম্বা পশমের গৃহপালিত বিড়ালের সাথে ক্রস ঘটানো হয়। এর ফলে আকারে বড় এবং লম্বাপশমের একটি স্বতন্ত্র জাতের বিড়ালের জাত তৈরী হয়। ব্রিডার মিস্টার আ্যান বেকার প্রথমে এদের নাম রেখেছেন চেরুবীম (Cherubim)। পরবর্তীতে এর নাম করা হয় রাগামাফিন। ২০০৩ সালে ক্যাট ফ্যানসিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশন (CFA) রাগামুফিনকে স্বতন্ত্র জাত হিসেবে স্বীকৃতি দেয়।
রাগডলের সাথে রাগামুফিন এর মূল ব্যবধান হচ্ছে রাগডলের পয়েন্ট কালার। কালার পয়েন্ট হচ্ছে শরীরের মাথা, পায়ের পাতা, লেজ কিংবা কানে কালো বর্ণের একধরনের চাপ। রাগডল বিড়ালে এই কালার পয়েন্ট দেখা যায় এবং এই কালার পয়েন্ট রাগডলের জন্য স্বীকৃত। যেখানে রাগামুফিন যেকোন রং বা প্যাটার্নের হতে পারে।
রাগামুফিন বিড়ালের বাচ্চাগুলোর জন্মের সময় সাদা বর্ণের হয়ে থাকে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে এদের দেহে রঙ্গের প্যার্টান দেখা যায়। রাগামুফিন বিড়ালগুলো শাররীক ভাবে পরিপূর্ণ হতে সময় লাগে প্রায় চার বছর।
ওজনঃ ০৭ থেকে ০৯ কেজি।
উচ্চতাঃ
১০ থেকে ১৫ ইঞ্চি।
গড় আয়ুঃ ১২ থেকে ১৬ বছর।
পশমঃ
লম্বা।
দামঃ রাগামুফিন বিড়ালগুলো তুলনামূলক ভাবে অনেক দামী। খাটি জাত এবং ভৌগলিক অবস্থান ভেদে এদের দাম ৬০০-১৩০০ ডলার পর্যন্ত হয়ে থাকে।