বাস্তুতন্ত্র বা ইকোসিস্টেম কি? বাস্তুতন্ত্রের উপাদান, গঠন ও প্রকারভেদ বিস্তারিত বিবরণ।
ইকোসিস্টেম বা বাস্তুতন্ত্র কী?
কোনও জীব বিচ্ছিন্নভাবে থাকতে পারে না। বেঁচে থাকার জন্য প্রত্যেক জীবকেই অন্যান্য জীব ও তার পরিবেশের বিভিন্ন উপকরনের সাহায্য নিতে হয়। এই কারনেই প্রকৃতি সুন্দরভাবে প্রতিটি উপাদানকে বিভাজন ও বন্টন করেছে সঠিক যায়গায় যাতে কোনও নির্দিষ্ট অঞ্চলের বিভিন্ন জীব তাদের মধ্যে এবং তার চারপাশের সাথে বসবাস করতে এবং যোগাযোগ করতে পারে।
বাস্তুতন্ত্রের কাঠামো ও উপাদান
বাস্তুতন্ত্রের সঙ্গায় আমরা জেনেছি বাস্তুতন্ত্র মূলত তিনটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত।
- অজীব উপাদান
- ভৌত উপাদান
- জীব উপাদান
একটি বাস্তুতন্ত্রের মূল কাঠামো এই তিনিটি উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। এই তিনটি উপাদান পরস্পরের সাথে শক্তির আদান প্রদানের মাধ্যমে বাস্তুতন্ত্র গঠন করে।
বাস্তুতন্ত্রের উপাদান সমূহ |
অজীব উপাদানঃ
একটি পরিবেশের যে সমস্ত উপাদানের প্রান নেই তারাই অজীব উপাদান। অজীব উপাদানকে আবার দুইটি গ্রুফে ভাগ করা হয়েছ।
ক. অজৈব উপাদানঃ
পরিবেশের বিভিন্ন গ্যাসীয় উপাদান, রাসায়নিক উপাদান ইত্যাদিই অজৈব উপাদান। যেমন- অক্সিজেন, কার্বন ডাইঅক্সাইড, নাইট্রোজেন, ক্যালসিয়াম, সালফার, ফসফরাস, অ্যামিনো অ্যাসিড, হিউমিক অ্যাসিড ।
খ. জৈব উপাদান:
জৈব উপাদানকে আমরা সহজ ভাবে বলতে পারি হিউমারাস। মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণী, কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট ইত্যাদিই জৈব উপাদান। এগুলো জৈবরাসায়নিক গঠনরূপে অজীব ও সজীব উপাদানের মধ্যে শক্তি প্রবাহের প্রারম্বিক শিকল তৈরী করে।
ভৌত উপাদানঃ
কোন একটি অঞ্চলের জলবায়ু, ভূ-প্রাকৃতি, মাটি সম্পর্কিত উপাদান সমূহই ভৌত উপাদান।
ক. জলবায়ুঃ
আমরা জানি কোন স্থানের ৩০ বছরের বেশি সময়ের আবহাওয়া অর্থাৎ বায়ু, তাপ, বৃষ্টিপাত প্রভৃতির গড়কে জলবায়ু বলা হয়। সুতরাং জলবায়ুর উপাদান হচ্ছে আলো, তাপ, বৃষ্টিপাত এবং আদ্রতা।
খ. ভূ-প্রাকৃতিঃ
ভূ-প্রকৃতি হচ্ছে কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের ভূমি ও ভূমির নিছের প্রাকৃতিক বস্ত্তসমূহের প্রকৃতি, গাঠনিক উপাদান, সজ্জা বিন্যাস, পরিবর্তন প্রভৃতি। যেমন ঐ অঞ্চলের পর্বতমালা ও উপত্যকার দিক, ঢাল বা খাড়া অবস্থা, মালভূমি, মহিসোপান, হ্রদ ইত্যাদি।
গ. মাটি সর্ম্পকিত উপাদানঃ
জীব উপাদানঃ
একটি পরিবেশের সজীব উপদান বা জীবিত উপাদনগুলোই জীব উপাদান। সহজ কথায় বলতে গেলে যাদের প্রান আছে তারাই জীব উপদান। যেমন- মানুষ, পশু পাখি, উদ্ভিদ, অনুজীব ইত্যাদি। জীব উপাদানকে আবার তাদের কার্যকরী অবস্থানের উপর ভিত্তি করে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক. উৎপাদকঃ
এগুলিকে অটোট্রফও (Autotrophs) বলা হয়। (গ্রীক ভাষায়, অটোস = স্ব, ট্রফি = পুষ্টি)) সমস্ত সবুজ গাছপালা এবং নির্দিষ্ট নীল-সবুজ শেত্তলাগুলি বাস্তুতন্ত্রে খাদ্য উত্পাদনকারী হিসাবে কাজ করে। একটি পরিবেশের সে সমস্ত উপাদান যারা খাদ্যের জন্য অন্য কোন উপাদানের উপর নির্ভরশীল নয় তাদেরকেই উৎপাদক বলে অর্থাৎ এরা স্বভোজী। এরা সূর্যের আলোক শক্তি বা রাসায়নিক শক্তিকে জৈবশক্তিতে রূপান্তরিত করে। যেমন- ক্ষুদ্র ও আণুবীক্ষণিক ফাইটোপ্লাঙ্কটন বা উদ্ভিদকণা, শৈভাল সবুজ উদ্ভিদ ইত্যাদি। সকল ধরনের প্রানীই খাদ্যের জন্য এই উৎপাদকের উপর পরোক্ষ ভাবে কিংবা প্রত্যক্ষ ভাবে নির্ভরশীল।
খ. খাদকঃ
খাদক জীব যারা খাদ্যের জন্য অন্যান্য জীবের উপর নির্ভর করে তাদের গ্রাহক বা হিটারোট্রফস (Heterotrophs) বলা হয়। (গ্রীক ভাষায়, হেটেরোস = অন্যান্য)। বাস্তুতন্ত্রের এসকল উপাদান টিকে থাকার জন্য উৎপাদকের উপর পরোক্ষ কিংবা প্রত্যক্ষভাবে নির্ভরশীল। মূলত সকল ধরনের প্রানীই খাদক শ্রেনীর অর্ন্তভূক্ত।
প্রতিটি পরিবেশেই তিনধরনের খাদকের উপস্থিতি দেখা যায়।
ক. প্রাইমারী বা প্রথম স্তরের খাদকঃ
সকল তৃনভোজী প্রানী যারা সরাসরি উৎপাদক থেকে খাদ্য গ্রহণ করে তাদের প্রাইমারী বা প্রথম স্তরের খাদক বলে। যেমন- ঘাস ফড়িং, মুরগি, গরু, ছাগল, হরিণ, হাতি ইত্যাদি।
খ. সেকেন্ডারী বা দ্বিতীয় স্তরের খাদকঃ
সকল ধরনের মাংসাশী প্রানী যারা খাদ্যের জন্য প্রাইমারী খাদকের উপর নির্ভরশীল তাদেরকে সেকেন্ডারী খাদক বলে। যেমন-ব্যাঙ, শিয়াল, বাঘ ইত্যাদি।
গ. টারশিয়ারী বা তৃতীয় স্তরের খাদকঃ
বিয়োজকঃ
বিয়োজকদের স্যাপ্রোফাইটস (saprophytes) (গ্রীক ভাষায় স্যাপ্রোস = পচা) বলে।বিয়োজক হচ্ছে তারাই যারা সজীব উপাদের মৃত কোষ কলা ভক্ষন করে টিকে থাকে। এরা সজীব উপাদানের মৃত কোষ কলা বিশ্লিষ্ট বা বিয়োজিত করে তা থেকে কিছু অংশ নিজেরা শোষণ করে এবং বাকি অংশের জটিল যৌগগুলোকে ভেঙে সরল জৈব যৌগে পরিণত করে পরিবেশে ফিরিয়ে দেয়,তাকে বিয়োজক বলে।
বাস্তুতন্ত্রের গঠন উপাদন সমূহ |
বাস্তুতন্ত্রের গঠন কাঠামোঃ
বাস্তুতন্ত্র জীবনের একটি কার্যকরি একক যেখানে কোন একটি অঞ্চলের সমস্ত জীবিত প্রাণী এবং তাদের পরিবেশের অন্যান্য সকল উপাদানগুলি একত্রে মিথষ্ক্রিয়ার মাধ্যমে একটি স্থিতিশীল কাঠামো করে। বাস্তুতন্ত্রের উৎপাদক মাটি থেকে প্রয়োজনীয় উপাদান নিয়ে সূর্যালোকের সাহায্যে নিজের খাবার তৈরী করে। উৎপাদককে আবার খাদকেরা ভক্ষন করে এবং খাদকদের মৃত অংশ বিয়োজকের মাধ্যমে পুষ্টি পুনরায় মাটিতে ফিরে যায়। এই ভাবেই একটি বাস্তুতন্ত্র স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। আর বাস্তুতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখতে পরিবেশের সকল উপাদন ভূমিকা রাখে।
যদি আমরা বাগানের বাস্তুতন্ত্রের দিকে নজর দিই তাহলে দেখতে পাবো। একটি বাগানে বিভিন্ন গাছপালা, প্রাণী যেমন মৌমাছি, প্রজাপতি, কেঁচো, ব্যাঙ এবং পাখি দেখতে পাবেন। তারা একে অপরের উপর এবং একই সাথে মাটি, বাতাস, পানির মতো অজীব উপাদানের উপর নির্ভর করে।
উদাহরণস্বরূপ, কেঁচো মাটি থেকে পুষ্টি পায় আবার তারা মাটি উর্বর রাখতে সাহায্য করে। মাটির এই উর্ভরতা ঘাস ও গাছের বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। পাখি, মৌমাছি ও প্রজাপতিরা বাগানের গাছপালা থেকে খাবার পান। আবার তারা গাছগুলির পরাগায়নে সহায়তা করে বাস্তুতন্ত্রকে স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা করে। মাটিতে বাস করে নির্দিষ্ট ধরণের ব্যাকটেরিয়া তারা পাখি কিংবা গাছের মৃত অংশ ভক্ষন করে মাটিতে আবার পুষ্টি সবরাহ করে।
একটি পরিবেশের সকল উপাদানের সমন্বয়ে বাস্তুতন্ত্র স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। তাই বাস্তুতন্ত্রকে স্তিতিশীল থাকতে সকল উপাদানের ভূমিক গুরুত্বপূর্ন। কোন কারনে কোন উপাদানের ঘাটতি দেখা যায় তাহলে তা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
একটি উদাহরনের সাহয্যে জিনিসটা ব্যাখ্যা করা যেতে পারে।
একটি বনের বাস্তুতন্ত্রের সর্বোচ্ছ খাদক হচেছ বাঘ। কোন কারনে যদি বাঘের সংখ্যা কমে যায় তাহলে সেকেন্ডারী খাদক হরিনের সংখ্যা বেড়ে যাবে। হরিনের সংখ্যা বেড়ে গেলে উৎপাদকের সংখ্যা কমে যাবে। সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, পরিবেশের যেকোন একটি উপাদারেন ঘাটতে হলে তা সমগ্র বাস্তুতন্ত্রের উপর প্রভাব ফেলে।
একটি পরিবেশের সকল উপাদানের সমন্বয়েই বাস্তুতন্ত্র গঠিত হয় এবং স্থিতিশীল অবস্থায় থাকে। আর পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য অবশ্যই বাস্তুতন্ত্রের স্তিতিশীলতা অপরিহার্য
উদাহরন হিসেবে আমরা এইখানে একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র ব্যাখ্যা করবো।
একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্রঃ
জলের গভীরতা এবং গাছপালা এবং প্রাণীর ধরণের ভিত্তিতে একটি পুকুরকে তিনটি স্তরে ভাগ করা যায়।
০১. লিটারালাল
পুকুরের অগভীর অঞ্চলটিকে লিটারাল জোন বলে। যা সাধারণত শিকড় গাছপালা দ্বারা দখলে থাকে।
০২. লিম্যাটেনিক
লিমনেটিক-জোনটি অগভীর অঞ্চল থেকে কিছুটা গভীর তবে সূর্যালোক প্রবেশ করতে পারে। এ অঞ্চলের জীবগুলি হ'ল ছোট ক্রাস্টেসিয়ান, রটিফার, পোকামাকড়, বিভিন্ন ধরনের বড় ও ছোট মাছ, বিভিন্ন ধরনের লার্ভা এবং শৈবাল।
০৩. প্রো-ফান্ডাল
পুকুরের গভীর জলের অংশ যেখানে সূয়ের আলো প্রবেশ করতে পারে না। এই অঞ্চলের জীব গুলো হলো শামুক, ঝিনুক, কাঁকড়া এবং কৃমি।
স্তরের ভিন্নতা থাকলেও প্রতিটি স্তরের জীব ও জড় উপাদান টিকে থাকার জন্য একে অপরের সাথে গভীর ভাবে সর্ম্পক যুক্ত। অন্যান্য বাস্তুতন্ত্রের মতো একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্রেও তিনটি উপাদান রয়েছে।
০১. অজীব উপাদান
একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে অজীব উপাদানগুলো জৈব ও অজৈব উপাদানের সমন্বয়ে গঠিত। পানিতে দ্রবীভূত অক্সিজেন, কার্বনডাই অক্সাইড, হিউমেরাস, ফসফরাস ইত্যাদি।
একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্র |
০২. ভৌত উপাদান
ভৌত উপাদানগুলো হচ্ছে, সূর্যালোকের পরিমান, পানির তাপমাত্রা, বায়ুর চাপ, বায়ু প্রবাহ, পানির গভীরতা ইত্যাদি। সূর্যালোক একটি পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের শক্তির প্রধান উৎস।
০৩. জীবজ উপাদান
জীবজ উপাদানকে তিনটি প্রধানত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়।
ক) উৎপাদাকঃ
পুকুরের বাস্তুতন্ত্রের প্রধান উত্পাদক হলো শৈবাল, ভাসমান জলজ উদ্ভিদ, Azolla, হাইড্রিলা, Nymphaea, Jussiaea, ইত্যাদি। এইসব উদ্ভিদগুলো সূর্যের আলোক শক্তিকে সালোকসংশ্লেষন প্রক্রিয়ায় রাসায়নিক শক্তিতে রূপান্তির করে খাদ্য আকারে গ্রহণ করে। খাদ্য আকারে সঞ্চিত এই রাসায়নিক শক্তিই সমগ্র জীবে বাহিত হয় এবং সালোকসংশ্লেষনে উৎপাদিত অক্সিজেন সমস্ত জীব জগতের টিকে থাকার কাজে ব্যবহৃত হয়।
খ) খাদকঃ
খাদ্যশৃঙ্খলের অবস্থান ও খাদ্যাভাসের প্রেক্ষিতে পুকুরের বাস্তুতন্ত্রে তিন ধরনের খাদকের উপস্থিতি দেখা যায়।
- প্রাইমারী খাদকঃ
এরা সরাসরি উৎপাদককে ভক্ষন করে জীবনধারন করে থাকে। একটি পুকুরের প্রাথমিক স্তরের খাদক হচেছ অন্যান্য জলজ প্রাণীর ট্যাডপোল লার্ভা যা সবুজ গাছপালা এবং শেত্তলাকে তাদের খাদ্য হিসাবে গ্রহণ করে। এছাড়াও মশার লার্ভা, জুয়োপ্লাংকটন, ছোট ছোট মাছ যারা নিজেদের খাদ্য নিজেরা তৈরী করতে পারে না বলে সরাসরি উৎপাদককে খাবার হিসেবে ব্যবহার করে।
- সেকেন্ডারী খাদক
একটি পুকুরের সেকেন্ডারী খাদক হচ্ছে যারা প্রাইমারী খাদককে খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যেমন ব্যাঙ, বড় মাছ, জলের সাপ, কাঁকড়া হ'ল মাধ্যমিক গ্রাহক।
- টারশিয়ারী বা সর্বোচ্চ খাদকঃ
টারশিয়ারী বা সর্বোচ্চ খাদক হচ্ছে যারা সেকেন্ডারী খাদককে খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করে। যেমন- বোয়াল মাছ, শোল মাছ, বক ইত্যাদি।
গ) বিয়োজক
কোন জলজ উদ্ভিদ এবং প্রাণী মারা গেলে প্রচুর পরিমাণে ব্যাকটিরিয়া এবং ছত্রাক তাদের মৃতদেহগুলিতে আক্রমণ করে এবং জটিল জৈব পদার্থকে সরল অজৈব যৌগে রূপান্তর করে। এই অজৈব পদার্থগুলোর কিছু অংশ তারা খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে এবং অবশিষ্ট অংশ মাটিতে জৈব উপাদান হিসেবে ফিরিয়ে দেয়। এই জৈব উপাদান বা হিউমেরাস আবার সবুজ উদ্ভিদ খাবার তৈরীর কাজে ব্যবহার করে।
বাস্তুতন্ত্রের প্রকারভেদঃ
বৈচিত্রময় পৃথিবীর একেক অঞ্চল একেক রকম। কোথাও সুনীল সমুদ্র আবার কোথায় ধূ ধূ মরুভূমি। কোথায় সুউচ্ছ পাহাড় আবার কোথায় সুবিশাল তৃনভূমি। যার কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশের ভিন্নতার কারনে ভিন্ন ভিন্ন বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে। যখন কোন একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রের বর্ণনা করতে যাবো তখন সেখানে ছোট বড় অনেক ধরনের বাস্তুতন্ত্র দেখতে পাবো কিন্তু যখন সমগ্র পৃথিবীর বাস্তুতন্ত্র ব্যখা করতে যাবো তখন আমরা চার ধরনের বাস্তুতন্ত্র দেখতে পাবো।
চার ধরনের বাস্তুতন্ত্রগুলো কি
সমগ্র পৃথিবীর ভৌগলিক অবস্থার উপর ভিত্তি করে বাস্তুতন্ত্রেকে চার ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
ক) ভূমির বাস্তুতন্ত্র
খ) মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্র
গ) সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্র
ঘ) কৃত্তিম বাস্তুতন্ত্র
প্রথম তিনটি বাস্তুতন্ত্রই প্রাকৃতিক ভাবেই গড়ে উঠেছে এবং চতুর্থটি মানুষের তৈরী। বাস্তুতন্ত্র বিভিন্ন আকারের হতে পারে। সর্ববৃহৎ বাস্তুতন্ত্র হচ্ছে সমুদ্রের পানির বাস্তুতন্ত্র এবং সবছেয়ে ছোট বাস্তুতন্ত্র হচ্ছে একোরিয়ামের বাস্তুতন্ত্র।
0ক) ভূমির বাস্তুতন্ত্রঃ
পৃথিবীর চারভাগের একভাগ স্থলভূমি। আর এ স্থলভূমিতে যে বাস্তুতন্ত্র গড়ে উঠেছে তাই স্থলভূমির বাস্তুতন্ত্র। আবার পৃথিবীর সব স্থলভূমির আকার আকৃতি, তাপমাত্রা, ভৌগলিক অবস্থান এক রকম নয়। যার কারনে পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্রেরও ভিন্নতা রয়েছে। সবদিক বিবেচনা করে ভূমির বাস্তুতন্ত্রকে তিনভাগে ভাগ করা যায়।
- তৃনভূমির বাস্তুতন্ত্র
- মরূভূমির বাস্তুতন্ত্র
- বনের বাস্তুতন্ত্র
- মেরু বা তুন্দ্রা অঞ্চলের বাস্তুতন্ত্র
খ) মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্র
মিঠা পানির বাস্তুতন্ত্রকে আবার দুই ভাগে ভাগ করা যায়।
- স্থির পানির বাস্তুতন্ত্রঃ যেমন- পুকুর, লেক, হৃদ এর বাস্তুতন্ত্র
- প্রবাহমান পানির বাস্তুতন্ত্রঃ যেমন- নদীর পানির বাস্তুতন্ত্র।
গ)সমুদ্রের বাস্তুতন্ত্রঃ
পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগই দখল করে রেখেছে বিভিন্ন ধরনের সাগর ও মহাসাগর। যাদের পানি লোনা। আর তাই লোনা পানির এই সামুদ্রিক বাস্তুতন্ত্রই পৃথিবীর সবছেয়ে বড় বাস্তুতন্ত্র।
ঘ) কৃত্তিম বাস্তুতন্ত্রঃ
যেসকল বাস্তুতন্ত্র মানুষের তৈরী অর্থ্যাৎ যেসকল বাস্তুতন্ত্রের নিয়ন্ত্রন মানুষের হাতে তাদেরকে কৃত্তিম বাস্তুতন্ত্র বলে। মানুষ নিজেদের প্রয়োজনে এই ধরনের বাস্তুতন্ত্র গঠন করে এবং তা নিয়ন্ত্রনও করতে পারে। যেমন- ধানক্ষেতের বাস্তুতন্ত্র, একোরিয়ামের বাস্তুতন্ত্র, বাগানের বা পার্কের বাস্তুতন্ত্র।
রেফারেন্স-
০১. Tansley (1934); Molles (1999), p. 482; Chapin et al. (2002), p. 380; Schulze et al. (2005); p. 400; Gurevitch et al. (2006), p. 522; Smith & Smith 2012, p. G-5
০২. Willis, A. J. (1997). “The ecosystem: an evolving concept viewed historically”, Functional Ecology 11:2, page 268-271.
০৩. Möller, D. (2020). Chemistry of the Climate System. Berlin Boston: De Gruyter.